মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেন এই প্রবন্ধে কিছু মিথ্যা তথ্য (ভুল তথ্য) উপস্থাপন করেছেন যা পার্সটুডের আজকের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
১- ওরেনের মতে: "মার্কিন-ইরান পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইল নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। সামরিক বিকল্প ত্যাগ করে ইসরাইলকে সরাসরি ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনা করতে হবে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেতে হবে এবং ইরান এবং তার মিত্রদের শক্তিশালী করতে পারে এমন একটি সম্ভাব্য চুক্তির ঝুঁকির জন্য তেল আবিব সরকারকে প্রস্তুত থাকতে হবে।"
১৯৪৮ সালের মে মাসে অবৈধ ইসরাইলের অস্তিত্ব ঘোষণার পর থেকে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে ক্রমাগতভাবে উসকানি দিয়ে আসছে, অসংখ্য যুদ্ধ শুরু করেছ এবং এখন গাজা যুদ্ধের সপ্তদশ মাসে তারা পশ্চিমাদের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সমর্থনে এই অঞ্চলের নির্যাতিত জনগণ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও গত কয়েক দশক ধরে তারা এই অঞ্চলে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতার জন্য ইরানকে দায়ী করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে একই সাথে তেহরানকে সন্ত্রাসবাদের সমর্থক হিসেবে চিত্রিত করেছে, যদিও ইরান বারবার বলেছে যে তার বৈদেশিক প্রধান নীতি হচ্ছে মুক্তি আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেয়া এবং এর আওতায় তারা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ আন্দোলন,ইয়েমেনি আনসারুল্লাহ আন্দোলন এবং ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের মতো আঞ্চলিক আন্দোলনগুলো নৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। ইরানোফোবিয়ার ঘটনার কাঠামোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ায় তার স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ইরানের একটি হুমকিস্বরূপ চিত্র তুলে ধরার উপরও তার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্রীভূত করেছে যাতে ইরানের সাথে আঞ্চলিক সরকারগুলো মুখোমুখি অবস্থানে দাড়ায় এবং তার অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি করতে পারে।
২- প্রবন্ধের লেখক প্রশ্ন করেছেন, "যখন সামরিক বিকল্পটি স্পষ্টতই টেবিল থেকে বাদ পড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে তখন ইসরাইল এখন কী করতে পারে?" তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ইসরাইলকে অবশ্যই সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে: এটি এমন একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে যেখানে একটিও সেন্ট্রিফিউজ নিষ্ক্রিয় না করে ইরানকে শক্তিশালী করবে। "এই ধরনের চুক্তি ইরানকে হামাস এবং হিজবুল্লাহকে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিতে পারে।"
বছরের পর বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সুরের সঙ্গে গলা মিলিয়ে কোনও প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালানোর অভিযোগ করে আসছে এবং এই অজুহাতে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক রাজনৈতিক ও নিষেধাজ্ঞামূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে। তবে এই বিষয়ে মার্কিন অবস্থানের স্পষ্ট বিরোধিতা করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের বারবার অভিযোগের বিপরীতে তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। চলতি বছরের ২৫ মার্চ প্রকাশিত ইরান সম্পর্কে তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড বলেছেন, "মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায় এখনও বিশ্বাস করে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ২০০৩ সালে স্থগিত করা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির অনুমোদন দেননি।"
৩. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক বিকল্প ব্যবহারে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ইসরাইল সব সময় কাজ করে আসছে। বুধবার নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে যে ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে পরিকল্পিত ইসরাইলি হামলা বাতিল করেছেন, বরং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য আলোচনার ওপর জোর দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে ২০২৫ সালের মে মাসের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং কমপক্ষে এক সপ্তাহ স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল।
"পরোক্ষ আলোচনার সময় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এই প্রবন্ধের লেখক দাবি করেছেন যে একটি দুর্বল চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার দুর্বলতা তুলে ধরতে পারে এবং রাশিয়া ও চীনের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে।" অতীতের মতো ইসরাইল নতুন চুক্তির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিরোধিতার উপর নির্ভর করতে পারে না। "ডেমোক্র্যাটরাও ওবামার ২০১৫ সালের চুক্তির মতো যেকোনো চুক্তিকে সমর্থন করবে এবং রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের বিরোধিতা করবে না।" অতএব, তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ইসরাইলের উচিত সতর্ক করা যে এই ধরনের চুক্তির ফলে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে। তিনি ইসরাইলকে হোয়াইট হাউসের সাথে ঘনিষ্ঠ আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে তারা প্রাচীরসম নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে কৌশলগত বোমারু বিমানের অ্যাক্সেস এবং সেগুলো ব্যবহারের জন্য ক্রুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। সুতরাং, তেল আবিব নতুন পরিস্থিতির সর্বাধিক সুবিধা নিতে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কৌশলগত অস্ত্র গ্রহণ করতে চায়।#
342/
Your Comment